Monday, July 22, 2013

আমাদের চেতনায় মুক্তিযুদ্ধ, দেশরত্ন শেখ হাসিনা নৌকা আর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু "আমরা মুজিবসেনা"









অসমাপ্ত আত্মজীবনী রুদ্ধশ্বাস ইতিহাস, অতৃপ্ত তৃষ্ণা : বঙ্গবন্ধুর লেখা প্রথম বই

অসমাপ্ত আত্মজীবনী রুদ্ধশ্বাস ইতিহাস, অতৃপ্ত তৃষ্ণা : বঙ্গবন্ধুর লেখা প্রথম বই

মোরসালিন মিজান ॥ অসমাপ্ত আত্মজীবনী। এমন শিরোনামই বলে দেয় গ্রন্থটি অসম্পূর্ণ। এতে পুরোপুরি নেই শেখ মুজিব। কিন্তু যেটুকু আছেন, সেটুকু তাঁর নিজ কলমে। এখানেই ব্যতিক্রম। এই এখানে নতুন করে কথা বলে ইতিহাস। স্বাধীন বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব প্রকাশিত হন তাঁর নিজ বয়ানে। ইতিহাসের বরপুত্রের এ বয়ান সোমবার প্রকাশিত হয়েছে বই আকারে। শিরোনাম ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বা ‘দি আনফিনিশড মেময়ারস।’ দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড ইউপিএল প্রকাশিত বইটি নিয়ে দারুণ কৌতূহলী এখন পাঠক। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত এবং পাকিস্তান থেকে একযোগে প্রকাশিত হয়েছে ‘দি আনফিনিশড মেময়ারস।’ ভারতে বইটি প্রকাশ করেছে সেখানকার খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠান পেঙ্গুইন ইন্ডিয়া। পাকিস্তানে প্রকাশ করেছে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস পাকিস্তান। আরও কয়েকটি ভাষায় বইটি প্রকাশের কাজ চলছে। জানা যায়, ২০০৪ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা চারটি খাতা আকস্মিকভাবে হাতে পান তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা। বহু পুরনো এসব খাতার পাতায় পাতায় ক্ষত। কোন কোন লেখা অস্পষ্ট। এর পরও গভীর কৌতূহল নিয়ে পাঠ করা করেন তিনি। আর তখনই জানা যায়, এটি বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী! ১৯৬৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে অন্তরীণ অবস্থায় পাণ্ডুলিপি তৈরি শুরু করেছিলেন শেখ মুজিব। কিন্তু সীমাহীন বেদনার যে লেখাটি তিনি শেষ করে যেতে পারেননি। তবে অসমাপ্ত হলেও পা-ুলিপিটির ইতিহাস মূল্য অনেক। সাহিত্য মূল্য অপরিসীম। এসব কারণে এটি বই আকারে প্রকাশের উদ্যোগ নেয়া হয়। বইটিতে শেখ মুজিবের আত্মজীবনী লেখার প্রেক্ষাপট, লেখকের বংশ পরিচয়, জন্ম, শৈশব, শিক্ষাজীবন, সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকা-ের ধারাবাহিক বর্ণনা পাওয়া যায় এ বইতে।

বঙ্গবন্ধুর লেখায় ওঠে এসেছে ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষ, বিহার ও কলকাতার দাঙ্গা, দেশ ভাগ, কলকাতাকেন্দ্রিক প্রাদেশিক মুসলিম ছাত্রলীগ ও মুসলিম লীগের রাজনীতি। ১৯৪৭ সালের দেশ ভাগের কথা তুলে ধরেছেন শেখ মুজিব। কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক মুসলিম লীগ সরকারের অপশাসন, আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা, যুক্তফ্রন্ট গঠন, নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন ইত্যাদি ইতিহাস ধারাবাহিকভাবে বইতে এসেছে। বিস্তৃতভাবে আছে পাকিস্তানী অপশাসনের কথা। এভাবে শেখ মুজিবের ব্যক্তি জীবন ইতিহাসের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। বইয়ের শুরুতে বঙ্গবন্ধুর স্বহস্তে লেখা নোটবুকের একটি পাতা। এতে ইংরেজীতে তিনি লিখেছেন একজন মানুষ হিসাবে সমগ্র মানবজাতি নিয়েই আমি ভাবি। একজন বাঙালী হিসাবে যা কিছু বাঙালীদের সঙ্গে সম্পর্কিত তাই আমাকে গভীরভাবে ভাবায়। এই নিরন্তর সম্পৃক্তির উৎস ভালবাসা, অক্ষয় ভালবাসা, যে ভালবাসা আমার রাজনীতি এবং অস্তিত্বকে অর্থবহ করে তোলে। আত্মজীবনীর অদ্ভুত সুন্দর শুরু। সরল স্বীকারোক্তি করে মুজিব লিখেছেন বন্ধুবান্ধবরা বলে, ‘তোমার জীবনী লেখ’। সহকর্মীরা বলে, ‘রাজনৈতিক জীবনের ঘটনাগুলি লিখে রাখ, ভবিষ্যতে কাজে লাগবে।’ আমার সহধর্মিণী একদিন জেলগেটে বসে বলল, ‘বসেই তো আছ, লেখ তোমার জীবনের কাহিনী।’ বললাম, ‘লিখতে যে পারি না; আর এমন কি করেছি যা লেখা যায়! আমার জীবনের ঘটনাগুলো জেনে জনসাধারণের কি কোন কাজে লাগবে? কিছুই তো করতে পারলাম না। শুধু এইটুকু বলতে পারি, নীতি ও আদর্শের জন্য আমরা সামান্য একটু ত্যাগ স্বীকার করতে চেষ্টা করেছি।’ এ ভূমিকা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের জায়গাটিকে পরিষ্কার করে। শুরুতেই প্রচ- বিনয় নিয়ে প্রকাশিত হন মহান নেতা। একইসঙ্গে আবারও জানার সুযোগ হয়, অন্য অনেক কাজের মতো জীবনী লেখার কাজটিতেও মূল অনুপ্রেরণা ছিল বেগম মুজিবের। বঙ্গবন্ধুর প্রিয় রেণু এই জীবনী লেখার জন্য জেলগেটে খাতা কিনে দিয়ে এসেছিলেন। সেসব খাতায় আত্মজীবনী লিখেছেন মুজিব। বইয়ের শুরুতে নিজের বংশ পরিচয়। শেখ বংশের পূর্ব পুরুষদের অনেকের কথা উল্লেখ করেন তিনি। এ বংশের প্রতিপত্তির কথা অনুমান করা যায় যখন তিনি লিখেন আমাদের বাড়ির দালানগুলোর বয়স দুইশত বছরেরও বেশি। অবশ্য কোন রকমের আক্ষেপ ছাড়াই মুজিব জানান, শেখ বংশ ধন সম্পত্তি ধরে রাখতে পারেনি। তবে পুরনো ইতিহাস বলে গর্ব করত। নিজের জন্ম ও শৈশব সম্পর্কে মুজিব জানান, ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ছোট দাদা খান সাহেব শেখ আবদুর রশিদ প্রতিষ্ঠিত ইংরেজী স্কুলে শুরু হয় শিক্ষা জীবন। তবে শান্ত শিষ্টটি নয় বরং খুব দুষ্ট প্রকৃতির ছিলেন বলে আত্মজীবনীতে জানান তিনি। খেলাধুলা করতেন। গান গাইতেন। শৈশবে দুইবার অসুস্থও হন তিনি। তাই চার বছর লেখা পড়া বন্ধ ছিল। অপারেশনের পর ১৯৩৬ সাল থেকে তিনি চশমা পরা শুরু করেন। শৈশবে তাঁর মানস গঠনের প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানা যায় তাঁর লেখা থেকে। মুজিব লেখেন আমার আব্বা খবরের কাগজ রাখতেন। তখন আনন্দবাজার, বসুমতী, আজাদ, মাসিক মোহাম্মদী ও সওগাত। ছোটকাল থেকে আমি সকল কাগজই পড়তাম। প্রতিবাদী চরিত্রটিও শৈশব থেকেই ছিল। আর তাই বালক বয়সেই জেলবাস কী বস্তু জেনে গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। মজার তথ্য দিয়ে আত্মজীবনীতে তিনি লেখেন জীবনের প্রথম কারাবাসের সময় মহিলা ওয়ার্ডে ছিলাম। কারাগারে মহিলা না থাকায় এমন ব্যবস্থা! ইতিহাসের বরপুত্র স্কুলে পড়ার সময় থেকেই যুক্ত হয়ে পড়েন রাজনীতির সঙ্গে। এটি সকলেরই জানা। তবে বইতে পাওয়া যায় ধারাবাহিক ও নিখুঁত একটি বর্ণনা। ১৯৪১ সালে মুজিব যখন ম্যাট্রিক পরীক্ষার্থী তখন রাজনীতির সঙ্গে দিন রাত কাটে। শেখ মুজিবের ভাষায় তখন রাজনীতি শুরু করেছি ভীষণভাবে। সভা করি, বক্তৃতা করি। খেলার দিকে আর নজর নেই। শুধু মুসলিম লীগ আর ছাত্রলীগ। সেই সময়ের উপলব্ধির কথা তুলে ধরে তিনি লেখেন পাকিস্তান আনতেই হবে, নতুবা মুসলমানদের বাঁচার উপায় নেই। মুজিবের ঘটনাবহুল সময় কাটে কলকাতার ইসলামীয়া কলেজে। এ সময় জাতীয় রাজনীতির সঙ্গে নিজেকে আরও বেশি ঘনিষ্ঠ করে নেন তিনি। ইতোমধ্যে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর স্নেহ আদায় করে নেন তরুণ কর্মী শেখ মুজিব। তাঁর সঙ্গে নিজের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের কথাও আত্মজীবনীতে উল্লেখ করেন তিনি। দু’জনের সম্পর্ক বর্ণনা করেন চমৎকারভাবে। জানান, একবার সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে কথাকাটাকাটিও হয়ে যায় তাঁর। তবে শেখ মুজিবকে সবচেয়ে ভালবাসতেন সোহরাওয়ার্দীই। তাই ফের কাছে ডেকেছেন। মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছেন। ১৯৪৩ সালে শেখ মুজিব যখন প্রাদেশিক মুসলিম লীগ কাউন্সিলের সদস্য তখন শুরু হয় ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ। এ দুর্ভিক্ষ মোকাবিলায় নিজের তৎপরতা সম্পর্কে বইতে লিখেছেন তরুণ নেতা শেখ মুজিব। বিহার ও কলকাতার দাঙ্গার কথা উল্লেখ করেছেন। বর্ণনা করেছেন দেশভাগের ইতিহাস। এই ধারাবাহিকতায় এসেছে পাকিস্তান আমল। বাঙালীর মুখের ভাষা কেড়ে নেয়ার ষড়যন্ত্র সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন আওয়ামী লীগ নেতা। পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে নানা বৈষম্যমূলক নীতির উল্লেখ করেছেন। বইতে তাঁর সময়ের বড় বড় রাজনীতিকদের প্রসঙ্গ এসেছে। এক জায়গায় মওলানা ভাসানী সম্পর্কে তিনি লিখেছেনÑ মওলানা ভাসানীর খেলা বোঝা কষ্টকর। তবে পড়তে পড়তে বইটি যখন শেষ হয় তখন একটি দীর্ঘশ্বাস বড় হয়ে ওঠে। মনে হয়, যদি আরও একটু লিখে যেতেন নেতা! যদি ৬৬-এর ছয় দফা, ৬৯-এর গণআন্দোলনের মুজিবকে পাওয়া যেত! যদি বাঙালীর একমাত্র মুক্তিদাতা জাতির জনককে পাওয়া যেত! না সেটি হয়নি। তাই তৃষ্ণাটা থেকেই যায়। ৩২৯ পৃষ্ঠার বইতে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলো নিয়ে আলাদা একটি অধ্যায় যুক্ত করা হয়েছে। পা-ুলিপির বেশ কয়েকটি ছবি তুলে দেয়া হয়েছে।  
  1. জীবনী গ্রন্থটির ভূমিকা লিখেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। এই গ্রন্থের পা-ুলিপি হাতে পাওয়ার অনুভূতির কথা জানিয়ে তিনি লিখেছেন আমি ২১ আগস্ট মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসেছি। মনে হয় যেন নতুন জন্ম হয়েছে। আর সেই সময় আমার হাতে এলো আব্বার হাতের লেখা এই অমূল্য আত্মজীবনীর চারখানা খাতা! আমার ফুফাতো ভাই বাংলার বাণী সম্পাদক শেখ ফজলুল হক মণির অফিসের টেবিলের ড্রয়ার থেকে এগুলো পাওয়া যায়। সম্ভবত আব্বা শেখ মণিকে টাইপ করতে দিয়েছিলেন, আত্মজীবনী ছাপাবেন এই চিন্তা করে। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তিনিও শাহাদাৎবরণ করায় তা করতে পারেননি। পরের লেখাগুলো আরও আবেগাপ্লুত করবে পাঠককে। শেখ হাসিনা এ অংশে লিখেছেন খাতাগুলো হাতে পেয়ে আমি তো প্রায় বাকরুদ্ধ। এই হাতের লেখা আমার অতি চেনা। ছোট বোন শেখ রেহানাকে ডাকলাম। দুই বোন চোখের পানিতে ভাসলাম। হাত দিয়ে ছুঁয়ে ছুঁয়ে পিতার স্পর্শ অনুভব করার চেষ্টা করলাম। তথ্যটা জেনে পাঠক হয়ত অবাক হবেন, এ বইয়ের ভূমিকা শেখ হাসিনা লিখেছেন কারাবন্দী অবস্থাতেই!Kazi NazrulShiplu RoyAyub Khan and 11 others like this.

পাণ্ডুলিপিতে বার বার হাত বুলাতামঃ শেখ হাসিনা

Photo: “পাণ্ডুলিপিতে বার বার হাত বুলাতাম। এ সময় যেন বাবার পরশ পেতাম। আমি সবাইকে এই বইটি পড়ার আহ্বান জানাই। কারণ একজন মানুষ একটি দেশ, জাতি ও স্বাধীনতার জন্য যে কতটা আত্মত্যাগ করতে পারে, এ বইটি পড়লেই সবাই তা বুঝতে পারবে।
আমার মা বঙ্গবন্ধুকে ডাইরি লেখার জন্য আগ্রহী করে তুলতেন। জেলখানায় খাতা দিয়ে আসতেন, আবার বাবা যখন জেল থেকে বের হতেন, তখন খাতা নিয়ে এসেছে কিনা খবর নিতেন। কিন্তু আজ তা বই আকারে প্রকাশিত হলেও মা দেখে যেতে পারলেন না।”
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
“পাণ্ডুলিপিতে বার বার হাত বুলাতাম। এ সময় যেন বাবার পরশ পেতাম। আমি সবাইকে এই বইটি পড়ার আহ্বান জানাই। কারণ একজন মানুষ একটি দেশ, জাতি ও স্বাধীনতার জন্য যে কতটা আত্মত্যাগ করতে পারে, এ বইটি পড়লেই সবাই তা বুঝতে পারবে। আমার মা বঙ্গবন্ধুকে ডাইরি লেখার জন্য আগ্রহী করে তুলতেন। জেলখানায় খাতা দিয়ে আসতেন, আবার বাবা যখন জেল থেকে বের হতেন, তখন খাতা নিয়ে এসেছে কিনা খবর নিতেন। কিন্তু আজ তা বই আকারে প্রকাশিত হলেও মা দেখে যেতে পারলেন না।” জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা “পাণ্ডুলিপিতে বার বার হাত বুলাতাম। এ সময় যেন বাবার পরশ পেতাম। আমি সবাইকে এই বইটি পড়ার আহ্বান জানাই। কারণ একজন মানুষ একটি দেশ, জাতি ও স্বাধীনতার জন্য যে কতটা আত্মত্যাগ করতে পারে, এ বইটি পড়লেই সবাই তা বুঝতে পারবে। আমার মা বঙ্গবন্ধুকে ডাইরি লেখার জন্য আগ্রহী করে তুলতেন। জেলখানায় খাতা দিয়ে আসতেন, আবার বাবা যখন জেল থেকে বের হতেন, তখন খাতা নিয়ে এসেছে কিনা খবর নিতেন। কিন্তু আজ তা বই আকারে প্রকাশিত হলেও মা দেখে যেতে পারলেন না।”

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
অসমাপ্ত আত্মজীবনী :
২০০৪ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা চারটি খাতা আকস্মিকভাবে তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার হস্তগত হয়। খাতাগুলি অতি পুরানো, পাতাগুলি জীর্ণপ্রায় এবং লেখা প্রায়শ অস্পষ্ট। মূল্যবান সেই খাতাগুলি পাঠ করে জানা গেল এটি বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী, যা তিনি ১৯৬৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে অন্তরীণ অবস্থায় লেখা শুরু করেছিলেন, কিন্তু শেষ করতে পারেননি। জেল-জুলুম, নিগ্রহ-নিপীড়ন যাঁকে সদা তাড়া করে ফিরেছে, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে উৎসর্গীকৃত-প্রাণ, সদাব্যস্ত বঙ্গবন্ধু যে আত্মজীবনী লেখায় হাত দিয়েছিলেন এবং কিছুটা লিখেছেনও, এই বইটি তার সাক্ষর বহন করছে।

বইটিতে আত্মজীবনী লেখার প্রেক্ষাপট, লেখকের বংশ পরিচয়, জন্ম, শৈশব, স্কুল ও কলেজের শিক্ষাজীবনের পাশাপাশি সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, দুর্ভিক্ষ, বিহার ও কলকাতার দাঙ্গা, দেশভাগ, কলকাতাকেন্দ্রিক প্রাদেশিক মুসলিম ছাত্রলীগ ও মুসলিম লীগের রাজনীতি, দেশ বিভাগের পরবর্তী সময় থেকে ১৯৫৪ সাল অবধি পূর্ব বাংলার রাজনীতি, কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক মুসলিম লীগ সরকারের অপশাসন, ভাষা আন্দোলন, ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা, যুক্তফ্রন্ট গঠন ও নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন, আদমজীর দাঙ্গা, পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের বৈষম্যমূলক শাসন ও প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের বিস্তৃত বিবরণ এবং এসব বিষয়ে লেখকের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার বর্ণনা রয়েছে। আছে লেখকের কারাজীবন, পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি ও সর্বোপরি সর্বংসহা সহধর্মিণীর কথা, যিনি তাঁর রাজনৈতিক জীবনে সহায়ক শক্তি হিসেবে সকল দুঃসময়ে অবিচল পাশে ছিলেন। একইসঙ্গে লেখকের চীন, ভারত ও পশ্চিম পাকিস্তান ভ্রমণের বর্ণনাও বইটিকে বিশেষ মাত্রা দিয়েছে। 

বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী পুনর্পাঠ

বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী পুনর্পাঠ  হারুন-অর-রশিদ

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান- এর সম্প্রতি প্রকাশিত অসমাপ্ত আত্মজীবনী আমাদের জাতীয় রাজনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ আকার গ্রন্থ। এতে ১৯৪৭ সালের বিভাগ-পূর্ব বাংলা ও বিভাগ-উত্তর পাকিস্তানি শাসনের গোড়ার দিকের বঙ্গবন্ধুর জীবন ঘনিষ্ঠবিচিত্র ঘটনাবলি মূর্ত হয়েছে। নিজ নেতৃত্ব ও কর্মগুণে সমকালীন রাজনীতিকদের অনেককে ছাপিয়ে তাঁর নেতৃত্বের উত্থান ইতিহাসের এ  কালপর্বেও দেদীপ্যমান। বঙ্গবন্ধু রচিত গ্রন্থের এবং যে কালপর্বে তা পরিব্যাপ্ত, ড. হারুন-অর-রশিদ-এর একাডেমিক উৎসাহ ও গবেষণার খেত্রেও একই। বলা আবশ্যক, ঐ গ্রন্থ পাঠ থেকেই তাঁর পুনর্পাঠ গ্রন্থের সৃষ্টি।বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিকথায় ব্যক্ত বিভিন্ন ঘটনার পাশাপাশি তাঁর রাজনৈতিক মানস-গঠন, নীতি-আদর্শ-নেতৃত্ব এবং রাজনৈতিক দর্শন, ছাত্রলীগ-আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠায় তাঁর নেতৃত্ব ও অনন্য ভুমিকা, তৎকালীন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, কারাস্মৃতি ইত্যাদি বিষয় পূর্বাপর সময়ের ক্যানভাসে সাজিয়ে ড. হারুন-অর-রশিদ এ গ্রন্থে বিশ্লেষণ করেছেন।

ঢাকা জেল 
১৬-৪-৫৯
রেনু, 
আমার ভালোবাসা নিও। ঈদের পরে আমার সাথে দেখা করতে এসেছো ছেলেমেয়েদের নিয়ে আস নাই। কারণ তুমি ঈদ করো নাই। ছেলেমেয়েরাও করে নাই। খুবই অন্যায় করেছো। ছেলেমেয়েরা ঈদে একটু আনন্দ করতে চায়। কারণ সকলেই করে। তুমি বুঝতে পারো ওরা কতো দুঃখ পেয়েছে। আব্বা ও মা শুনলে খুবই রাগ করবেন। আগামী দেখার সময় ওদের সকলকে নিয়ে আসিও। কেন যে চিন্তা করো বুঝি না। আমার যে কবে মুক্তি হবে তার কোনো ঠিক নাই। তোমার একমাত্র কাজ হবে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শিখানো।টাকার দরকার হলে আব্বাকে লেখিও, কিছু কিছু মাসে মাসে দিতে পারবেন। হাছিনাকে মন দিয়ে পড়তে বলিও। কামালের স্বাস্থ্য মোটেই ভাল হচ্ছে না। ওকে নিয়ম মতো খেতে বলিও। জামাল যেন মন দিয়ে পড়ে আর ছবি আঁকে। এবার একটা ছবি একে যেন নিয়ে আসে আমি দেখব। রেহানা খুব দুষ্ট ওকে কিছুদিন পর স্কুলে দিয়ে দিও জামালের সাথে।যদি সময় পাও নিজেও একটু লেখাপড়া করিও। একাকী থাকাতে একটু কষ্ট প্রথম হতো। এখন অভ্যাস হয়ে গেছে কোন চিন্তা নাই। বসে বসে বই পড়ি। তোমার শরীরের প্রতি যত্ন নিও।
ইতি-
তোমার মুজিব
:: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান (অসমাপ্ত আত্মজীবনী)

incomplete lifestory of Bangabandhu

২০০৪ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা চারটি খাতা আকস্মিকভাবে তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার হস্তগত হয় খাতাগুলি অতি পুরানো, পাতাগুলি জীর্ণপ্রায় এবং লেখা প্রায়শ অস্পষ্ট মূল্যবান সেই খাতাগুলি পাঠ করে জানা গেল এটি বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী, যা তিনি ১৯৬৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে অন্তরীণ অবস্থায় লেখা শুরু করেছিলেন, কিন্তু শেষ করতে পারেননি জেল-জুলুম, নিগ্রহ-নিপীড়ন যাঁকে সদা তাড়া করে ফিরেছে, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে উৎসর্গীকৃত-প্রাণ, সদাব্যস্ত বঙ্গবন্ধু যে আত্মজীবনী লেখায় হাত দিয়েছিলেন এবং কিছুটা লিখেছেনও, এই বইটি তার সাক্ষর বহন করছে। বইটিতে আত্মজীবনী লেখার প্রেক্ষাপট, লেখকের বংশ পরিচয়, জন্ম, শৈশব, স্কুল কলেজের শিক্ষাজীবনের পাশাপাশি সামাজিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, দুর্ভিক্ষ, বিহার কলকাতার দাঙ্গা, দেশভাগ, কলকাতাকেন্দ্রিক প্রাদেশিক মুসলিম ছাত্রলীগ মুসলিম লীগের রাজনীতি, দেশ বিভাগের পরবর্তী সময় থেকে ১৯৫৪ সাল অবধি পূর্ব বাংলার রাজনীতি, কেন্দ্রীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগ সরকারের অপশাসন, ভাষা আন্দোলন, ছাত্রলীগ আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা, যুক্তফ্রন্ট গঠন নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন, আদমজীর দাঙ্গা, পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের বৈষম্যমূলক শাসন প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের বিস্তৃত বিবরণ এবং এসব বিষয়ে লেখকের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার বর্ণনা রয়েছে। আছে লেখকের কারাজীবন, পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি সর্বোপরি সর্বংসহা সহধর্মিণীর কথা, যিনি তাঁর রাজনৈতিক জীবনে সহায়ক শক্তি হিসেবে সকল দুঃসময়ে অবিচল পাশে ছিলেন। একইসঙ্গে লেখকের চীন, ভারত পশ্চিম পাকিস্তান ভ্রমণের বর্ণনাও বইটিকে বিশেষ মাত্রা দিয়েছে
--------------------------------------------------------------
শেরে বাংলা মিছামিছিই ‘শেরে বাংলা’ হন নাই। বাংলার মাটিও তাঁকে ভালবেসে ফেলেছিল। যখনই হক সাহেবের বিরুদ্ধে কিছু বলতে গেছি, তখনই বাধা পেয়েছি। একদিন আমার মনে আছে একটা সভা করছিলাম আমার নিজের ইউনিয়নে, হক সাহেব কেন লীগ ত্যাগ করলেন, কেন পাকিস্তান চান না এখন? কেন তিনি শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির সাথে মিলে মন্ত্রিসভা গঠন করেছেন? এই সমস্ত আলোচনা করছিলাম, হঠাৎ একজন বৃদ্ধ লোক যিনি আমার দাদার খুব ভক্ত, আমাদের বাড়িতে সকল সময়ই আসতেন, আমাদের বংশের সকলকে খুব শ্রদ্ধা করতেন — দাঁড়িয়ে বললেন, “যাহা কিছু বলার বলেন, হক সাহেবের বিরুদ্ধে কিছুই বলবেন না। তিনি যদি পাকিস্তান না চান, আমরাও চাই না। জিন্নাহ কে? তার নামও তো শুনি নাই। আমাদের গরিবের বন্ধু হক সাহেব।” 
-------- অসমাপ্ত আত্মজীবনী

The Unfinished Memoirs

The Unfinished Memoirs



When Sheikh MujiburRahman’s diaries came to light in 2004, it was an indisputably historic event. His daughter, Bangladesh Prime Minister Sheikh Hasina, had the notebooks—their pages by then brittle and discoloured—carefully transcribed and later translated from Bengali into English.Written during Sheikh Mujibur Rahman’s sojourns in jail as a state prisoner between 1967 and 1969, they begin with his recollections of his days as a student activist in the run-up to the movement for Pakistan in the early 1940s. They cover the Bengali language movement, the first stirrings of the movement for Bangladesh independence and self-rule, and powerfully convey the great uncertainties as well as the great hopes that dominated the time. The last notebook ends with the events accompanying the struggle for democratic rights in 1955.



These are Sheikh Mujib’s own words—the language has only been changed for absolute clarity when required. What the narrative brings out with immediacy and passion is his intellectual and political journey from a youthful activist to the leader of a struggle for national liberation. Sheikh Mujib describes vividly how—despite being in prison—he was in the forefront of organizing the protests that followed the declaration of Urdu as the state language of Pakistan. On 21 February 1952 the police opened fire on a peaceful student procession, killing many. That brutal action unleashed the powerful movement that culminated in the birth of the new nation of Bangladesh in 1971.
This extraordinary document is not only a portrait of a nation in the making; it is written by the man who changed the course of history and led his people to freedom.